আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বৈশ্বিক বাণিজ্যের ১২-১৫ শতাংশ পণ্যবাহী জাহাজ লোহিত সাগর দিয়ে চলাচল করে। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনের প্রতিবাদে এ পথে চলা পণ্যবাহী জাহাজে হামলা চালিয়েছে হুথি বিদ্রোহীরা। ইয়েমেনে হুথিদের দমন করতে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের যৌথ বাহিনী। এ তিন কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ বাণিজ্য পথে জাহাজ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কারখানায় উপকরণ সংকট দেখা দিয়েছে এবং উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতি আবার বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
বিশ্লেষকরা জানান, বাব আল-মান্দেব প্রণালি (২০ মাইল প্রশস্ত চ্যানেল) ইয়েমেন ও আফ্রিকার ইরিত্রিয়া ও জিবুতিকে বিভক্ত করেছে। গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলা শুরু করে। এরপর শিপিং জায়ান্টরা লোহিত সাগর দিয়ে পণ্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দেয়।
ব্রিটিশ সমুদ্র নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান অ্যামব্রেয়ের মতে, চলতি সপ্তাহে পশ্চিমা বাহিনীর হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও হামলা অব্যাহত। ইয়েমেনের দক্ষিণ উপকূলে একটি মার্কিন মালিকানাধীন পণ্যবাহী জাহাজ আক্রান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে দু:সংবাদ
প্রধান শিপিং সংস্থাগুলো এখন আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে তাদের জাহাজগুলোকে পরিচালনা করছে। এতে সিঙ্গাপুর ও উত্তর ইউরোপের মধ্যে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে ১২ দিন অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হচ্ছে।
শিপিং জায়ান্ট হ্যাপাগ-লয়েডের মতে, সিঙ্গাপুর থেকে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে যাতায়াতকারী জাহাজের জন্য অতিরিক্ত ১৮ দিন যোগ করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ, জাহাজ ভাড়া ও কর্মীদের বেতন।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, কভিড-১৯ মহামারী এবং এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সে মূল্যস্ফীতিও বিভিন্ন দেশে কমতে শুরু করেছে। তবে লোহিত সাগরের অনিশ্চয়তা নতুন করে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে তেল ও খাদ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্স জানিয়েছে, এশিয়া ও উপসাগরীয় দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের প্রায় ১৫ শতাংশ সমুদ্রপথে পাঠানো হয় ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায়। এর মধ্যে রয়েছে ২১ দশমিক ৫ শতাংশ পরিশোধিত তেল এবং ১৩ শতাংশের বেশি অপরিশোধিত। এছাড়া তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পরিবহনে লোহিত সাগর একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার পরে গত সপ্তাহে তেলের দাম বেড়েছে।
বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান প্যানমুর গর্ডনের তেল ও গ্যাস গবেষণার পরিচালক অ্যাশলে কেল্টি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটছে তাতে মার্কেট তুলনামূলকভাবে কম বিশৃঙ্খল”ছিল। কারণ তেলের চাহিদা কম এবং অতিরিক্ত সরবরাহ ছিল।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, বাব এল-মান্দেব প্রণালি দিয়ে জ্বালানিবাহী জাহাজ পাঠানো বন্ধ রেখেছে এলএনজির প্রধান রপ্তানিকারক কাতার।
কেমব্রিজের কুইন্স কলেজের সভাপতি এবং আর্থিক সেবা জায়ান্ট অ্যালিয়ানজের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ডক্টর এল-এরিয়ান বলেন, ‘পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে আমরা উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মর্টগেজ সুদের উচ্চ হার এবং নিম্ন প্রবৃদ্ধি দেখতে পাব। তবে এটা ২০২১ ও ২০২২ সালে যা ঘটেছে তার তুলনায় কিছুই নয়। ধাক্কাটি ততটা বড় হবে না। তবে যা ঘটছে তা দুর্ভাগ্যজনক।’
ভাষান্তর: বণিক বার্তা
Leave a Reply